প্রজাপতি জগতে একদিন

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গার খবর সবারই জানা। ঝাউগাছে ঢাকা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এখানকার সমুদ্রসৈকতে হয়তো এসেছেন অনেকেই। কিন্তু পতেঙ্গার নতুন একটি ভ্রমণ গন্তব্যের কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। সেটি হলো প্রজাপতির এক জগত_'বাটারফ্লাই পার্ক'। পতেঙ্গার শাহ আমানত বিমান বন্দরের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় এ জায়গাটি। বাটারফ্লাই পার্কের সামনে রঙিন প্রজাপতির বিশাল বিশাল ছবিতে মোড়ানো দেয়াল দেখে কারো বুঝতে বাকি থাকবে না, ভেতরটায় কী অপেক্ষা করছে তার জন্য। ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে ছোট্ট কাঠের সেতু পেরিয়ে ওপারেই লোহার জালে তৈরি বিশাল প্রজাপতির জগত। লোহার তৈরি চিকন শেকলের প্রথম দরজার একটু পরেই মোটা পলিথিনের ভার্টিকাল বস্নাইন্ডার ঠেলে ঢুকতে হয় ভেতরে। প্রজাপতি যেন তার জগত ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে না পারে এজন্যই এ রকম প্রবেশদ্বার।

ভেতরে ঢুকে একটু চমকেই যেতে হয়। কারণ, সে এক ভিন্নজগৎ! ছোট্ট জলধারার চারপাশে নানা রকম গাছপালা, বেশিরভাগই বনফুল। কৃত্রিম ফোয়ারার প্রবাহে সে জলধারা স্রোত। গাছের ছায়ায় ছায়ায় ট্রেতে খাবার দেওয়া। উড়তে উড়তে ক্লান্ত কোনো প্রজাপতি এসে বসে গেছে সেখানে খাবার খেতে। একেক গাছে, ফুলে একেক রকম প্রজাপতি। কারো চঞ্চল ওড়াউড়ি, কেউ আবার বিশ্রাম নিতে হয়তো বসে গেছে পাতার আড়ালে-আবডালে। কোনো কোনো গাছের পাতায় দেখা যাবে শুককিট, যা থেকেই মূলত প্রজাপতির জন্ম। গাছের ছায়ায় ছায়ায় আবার বসার ব্যবস্থাও করা আছে। তবে সে ব্যবস্থাও ভিন্নতর। বসার চেয়ারগুলো দেখে প্রথম দর্শনে কেউ বিশাল আকৃতির কোনো প্রজাপতি ভেবে ভুল করতে পারেন।

এতক্ষণ দেখলেন জীবন্ত প্রজাপতি। এবার চলুন প্রজাপতির আরেক জগতে। এটি মূলত প্রজাপতি জাদুঘর। এর ভেতরের দেয়ালে কাচঘেরা বাক্সে সাজিয়ে রাখা আছে নানান প্রজাতির নানান প্রজাপতি। এখানে যেসব প্রজাপতি মারা গেছে, সেগুলো ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মৃত প্রজাপতিগুলো সংগ্রহ করে এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে যত্নের সঙ্গে।

প্রজাপতির জাদুঘর থেকে বেরিয়ে একটু সামনে গেলে শিশুদের খেলাধুলার জন্য জায়গাটি সাজানো হয়েছে পরিপাটি করে। পাশেই জলাশয়। সেখানে ফাইবারের তৈরি বোট চালানোর ব্যবস্থা আছে। আর প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের জন্য একটি বনভোজন কেন্দ্রও আছে এখানে। এ ছাড়া বাটারফ্লাই পার্কের একপাশে আছে আধুনিক রেস্ট হাউস আর রেস্তোরাঁ। বেশ সাজানো গোছানো রেস্ট হাউসের কক্ষগুলো। শীতল হাওয়া, উষ্ণ পানির ব্যবস্থা ছাড়াও আধুনিক সব সুবিধা আছে এ রেস্ট হাউসে। বেড়াতে এসে ভালো লেগে গেলে জায়গাটিতে থেকেও যেতে পারেন।

প্রয়োজনীয় তথ্য

বাটারফ্লাই পার্কে প্রবেশমূল্য বড়দের ১০০ টাকা ও ছোটদের ৫০ টাকা। তবে, বর্তমান প্রবেশমূল্যে ছাড় দিয়ে যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রেস্টহাউজের বাটারফ্লাই সু্যইট কক্ষের প্রতিদিনের ভাড়া ৭,০০০ টাকা, সুপার ডিলাক্স কক্ষের ভাড়া ৫,০০০ টাকা ও সাধারণ কক্ষের ভাড়া ৪,০০০ টাকা। এ ছাড়া এ মূল্যের সঙ্গে রয়েছে ১০% সার্ভিস ও ১৫% ভ্যাট। যোগাযোগ : ১৫, নেভাল একাডেমি, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম। ফোন-০১১৯৫০১০৫০০, ০১১৯৫০১০৬০১।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যেতে পারেন চট্টগামে। সড়কপথে গ্রীনলাইন (০২-৯৩৪২৫৮০), সোহাগ পরিবহন (০২-৯৩৪৪৪৭৭), সৌদিয়া এস আলম (০১১৯৭-০১৫৬৩৬-৬৩৮) ইত্যাদি পরিবহনের বিলাসবহুল এসি বাস যায় চট্টগ্রাম। ভাড়া ৬০০-৮২৫ টাকা। আর গ্রীন লাইন, এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী ইত্যাদি পরিবহনের ভালো মানের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। রেলপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, মহানগর গোধুলী ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত এগারোটায়। ভাড়া এসি বার্থ ৭৫৬ টাকা, এসি সিট ৪৫৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৫৫, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ২৯০, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৩৮০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০, শোভন ১২৫, সুলভ ১০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার এবং জিএমজির বিমান চলাচল করে এ পথে।

বিমানে গেলে এয়ারপোর্টের সঙ্গেই বাটারফ্লাই পার্ক। এ ছাড়া অন্য যে কোনো বাহনে চট্টগ্রাম শহরে এসে সেখান থেকে পতেঙ্গাগামী বাস কিংবা লেগুনায় চড়ে আসা যায় জায়গাটিতে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সিএনজিচালিত বেবিটেক্সিতেও আসতে পারেন, ভাড়া লাগেব ২০০-২৫০ টাকা।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.