ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ Rumi, March 13, 2011 বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষি। এই কৃষি আজ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। বর্তমান এ চ্যালেঞ্জ থেকেই আমাদের দেশের কৃষকরা এক ফসলি জমি থেকে দুই বা ততোধিক ফসল তুলতে জমিতে ব্যাপকহারে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক সার দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে কতিপয় অত্যাবশ্যকীয় সার আদৌ ব্যবহার করছেন না। এতে মাটির উর্বরা শক্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি অপচয় হচ্ছে মূল্যবান রাসায়নিক সার। মাটির অনুজীবের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার মাটির নিচে চুয়ে নদী-নালায় মিশে যাচ্ছে। আবার গ্যাস হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে পরিবেশ দূষিত করছে। মাটি হতে গাছ তার বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ১৪টি উপাদান পেয়ে থাকে। কিন্তু অসমহারে ও যথেচ্ছা সার ব্যবহার ও নিবিড় চাষাবাদের কারণে মাটিতে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় ১৪টি পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। এ জন্য সার প্রয়োগের আগে অবশ্যই ফসলি জমির মাটি পরীক্ষা করে পরিমিত মাত্রায় সুষম সার দিতে হবে। এতে যেমন মাটির উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব হয় তেমনি সারের অপচয় রোধ করাও সম্ভব হয়। বলা বাহুল্য যে গত ২০০৮-০৯ সালে দেশে মোট ৩০ লক্ষ ৫ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র ইউরিয়ার ব্যবহার হয় ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন । অথচ ইউরিয়া সারের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ফসলের কাজে আসে। এই বিপুল পরিমাণ সারে সরকারের ভর্তুকি গুনতে হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। অথচ মাটি পরীক্ষা করে পরিমিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার ভতর্ুকি বাঁচানো সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে মাটি পরীক্ষা করে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস পায় এবং ধানের ফলন গড়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগ এবং অন্যান্য ফসলে ১০ থেকে ১৫ ভাগ পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি পায়। তথ্য প্রযুক্তির সুফল কৃষকদের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেয়ার লক্ষ্যে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট হাতে নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। এর মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ কার্যক্রম অন্যতম। সংশিস্নষ্ট মহলের মতে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে দেশে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ২০ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ২৪ মিলিয়ন টনে উন্নীত হবে। এ কার্যক্রমের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কতর্ৃক "বেস্ট আইটি ইউজ-২০১০" পুরস্কার দেয়া হয়। গবেষণাগারের মাধ্যমে ডিজিটাল সার সুপারিশ কার্যক্রম:মাটির নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে ফসলের চাহিদা মাফিক ফসল বিন্যাস অনুযায়ী ডিজিটাল উপায়ে সার সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশের এ সফটওয়্যারটি বেসরকারি সংস্থা ক্যাটালিস্টের সহযোগিতায় প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশে মাটি পরীক্ষার জন্য সরকারিভাবে ১৬টি স্থায়ী গবেষণাগার রয়েছে যা দেশের বৃহত্তর জেলাসমূহে অবস্থিত। কৃষক, গবেষকসহ যেকোনো কৃষিজীবী বছরের যেকোনো সময়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে নিকটস্থ এসব গবেষণাগার থেকে মাটি পরীক্ষা করতে পারেন। গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা মাটির নমুনা পরীক্ষা করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ কার্ড প্রণয়ন করে থাকেন। অনলাইনের মাধ্যমে সার সুপারিশ কার্যক্রম: মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট মাটি পরীক্ষার জন্য তৈরি করেছে 'সারের প্রয়োগমাত্রা নিরূপণের সফটওয়্যার'। মাটিতে কি কি উপাদান আছে তা মাটি পরীক্ষা করে বের করে এই সফটওয়্যারে বসিয়ে, সেই সাথে জমির পরিমাণটুকু বসিয়ে দিলেই কৃষক বা যে কেউ জেনে যাবেন তার জমিতে কি পরিমাণ সার লাগবে। তথ্য প্রযুক্তির এই সুফলটিও মাঠ পর্যায়ে অনেক কৃষক এখন গ্রহণ করছে। ত্রিশটি এলাকার প্রায় ২৪০০ জন কৃষক এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাদের জমিতে সার প্রয়োগ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ফলে সারের পেছনে কৃষকদের ব্যয় কমে এসেছে, কৃষকের উৎপাদন ভাল হয়েছে এবং মাটির গুণাগুণ উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে এই প্রযুক্তিটি একশ'টি এলাকায় ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনলাইনে সার সুপারিশ প্রক্রিয়া:প্রথমে অনলাইন সংযোগ নিয়ে িি.িভৎং-নফ.পড়স অথবা ভৎং.ংৎফর.মড়া.নফ এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। তারপর ব্যবহারকারী ও পাসওয়ার্ড হিসেবে উভয় স্থানে "ঝজউও" দিতে হবে। এরপর এন্টার (ঊঘঞঊজ) চাপতে হবে। নতুন পেজ আসবে, সেখানে কৃষকের নাম, গ্রাম, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, মাটির ধরণ, ফসলের ক্যাটাগরি (শস্য/অাঁশ/ডাল/মশলা), ফসলের নাম, জমির পরিমাণ (শতাংশে), ভূমির শ্রেণী (উঁচু/মাঝারি উঁচু/ মাঝারি নিচু/নিচু/অতি নিচু) এবং টিএসপি/ডিএপি ঈষরপশ করতে হবে। এগুলো ঠিকঠিক ঈষরপশ করার পর সার্চ দিতে হবে। কাংখিত সার সুপারিশ কার্ড প্রণয়ন করে দেবে সফটওয়্যার। এবার প্রিন্ট অপশনে গিয়ে প্রিন্ট দিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সার সুপারিশ কার্যক্রম:বাংলাদেশের বৃহৎ দু'টি মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণফোন এবং বাংলালিংক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের চ্যানেল পার্টনার হিসেবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল কোম্পানি- 'বাংলালিংক' তাদের জিজ্ঞাসা '৭৬৭৬' নম্বরটি কৃষি সংশিস্নষ্ট সকলের সেবাদানের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। যেকোনো কৃষক এই নম্বরে ফোন করে মাটির স্বাস্থ্যতথ্য তথা ফসল চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সার সুপারিশ মাত্রা জেনে নিতে পারেন। বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য এটি তথ্য প্রযুক্তির একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। মোবাইলে কৃষিতথ্য পাবার সাথে সাথে কৃষকরা তার গ্রামের টেলিসেন্টারটিতেও (তথ্যকেন্দ্রে) যাওয়া-আসা করেন। বাংলাদেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ৩০০০ এরও বেশি টেলিসেন্টার রয়েছে। গ্রামীণফোনের কমিউনিটি তথ্যকেন্দ্র (ঈওঈ) থেকে ও কৃষক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ তথ্য পেতে পারেন। এ তথ্যকেন্দ্রগুলো থেকে কৃষি, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা, আইনী সহায়তা, ব্যবসায়িক তথ্যাবলীসহ নানান তথ্য পাওয়া যায়। মোবাইলে সার সুপারিশ প্রক্রিয়া:কৃষক সহজেই তার জমির প্রকার, কি ফসল ফলাতে চান, ইউনিয়নের নাম, উপজেলা ও জেলার নাম এসব তথ্য দিলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোবাইলের মাধ্যমে সার সুপারিশ বিষয়ক তথ্য দেয়া হয়। প্রযুক্তিবিদরা আশাবাদী, কৃষিবিদদের সাথে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুফল পেঁৗছে দিতে পারবেন বাংলাদেশের কৃষকদের দোরগোড়ায়। কৃষকদের আগ্রহ এবং নতুন প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্টতা সত্যিই প্রশংসনীয়। লেখক:বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মৃৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ Src: http://ittefaq.com.bd/content/2011/03/13/news0981.htm Collected Articles বাংলা