Rumi, March 22, 2012March 22, 2012 ‘টু বি অর নট বি: দ্যাট ইজ দি কোশ্চেন।’ আজ কি আমাদের সেই স্বপ্নপূরণের দিন? আজ কি এশিয়ায় অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন? যে দল সমর্থন করি, সেই দলের খেলার দিন বুক কাঁপে, জিভ শুকিয়ে কাঠ, মুখে খাবার রোচে না। কারও কোনো প্রশ্ন কানে যায় না। আর আজ বাংলাদেশের খেলা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা! নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ ধবল ধোলাই করার পর থেকেই স্বপ্ন বুনে চলেছি। কানে কানে এই মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি যে, তোমরা আত্মবিশ্বাসী হও, তোমরা পারবে। দেয়ার ক্যান বি মিরাকলস হোয়েন ইউ বিলিভ। অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী হতে বলছি না, বলছি নিজের ওপরে ভরসা রাখতে। বিশ্বকাপেও বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম। আবার বড় আঘাতও পেয়েছিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৫৮ রান করে মুখ চুন হয়ে গিয়েছিল। তখনো দলকে ‘দুয়ো’ দিইনি। দলে বলে ছুটে গেছি চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ রান তাড়া করতে গিয়ে উইকেট সব হারিয়ে ফেলছিল। অনেকেই গ্যালারি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। কাতর কণ্ঠে বলেছিলাম, ‘ভাই হবে, শফিউলের টেস্টে ফিফটি আছে, থাকেন। হবে।’ হয়েছিল তো! বাংলাদেশ হারিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সাকিব আল হাসানের চোখে সেদিন ছিল জল। তখন আমরাও কেঁদে বুকের ভার কমিয়েছিলাম। আজ আমরা স্বপ্নপূরণের বড় কাছাকাছি এসে গেছি। কারও দয়ায় নয়, বাংলাদেশের বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলো, যাদের শরীরে এখনো অপুষ্টির চিহ্ন, তারা আমাদের স্বপ্নতোরণে এনে দিয়েছেন তাদের ব্যাট আর বলের দাপটে। নাসিরকে দেখুন, কি হ্যাংলা-পাতলা। মুশফিককে মনে হয় এত্তটুকুন একটা ছেলে। সাকিব আল হাসান ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৯০ রান করার পরে হেলমেট খুলে ফেলেছিলেন। তার মাথায় পানি ঢালতে হয়েছিল। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ব্যাট করতে নেমে তিনি ইঙ্গিতে দেখাচ্ছিলেন ‘বুকে ব্যথা’, ডাক্তার দৌড়ে ছুটে গেছে, একটু পরে এন্টাসিডের শিশি নিয়ে ছুটলেন সহখেলোয়াড়। আহারে, আমার গরিব মায়ের গরিব সন্তানেরা। ৩২ কোটি চোখ চেয়ে আছে ওদের দিকে। আমাদের সব ভালোবাসা, সব শুভকামনা, সব দোয়া, সব প্রার্থনা ওদের জন্য। হে আল্লাহ, আমাদের এই দলটিকে আজ তুমি জিতিয়ে দাও। হে ঈশ্বর। হে ভগবান। বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার ফুল বাংলার ফল পুণ্য হোক। আজ বাংলাদেশ জয়লাভ করলে এই ভূগোলের ক্রিকেটের পথরেখা পাল্টে যাবে। শুধু কি ক্রিকেট, আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক জীবনেও অনেক অপ্রাপ্তির মধ্যে আজকের জয় আমাদের দিতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর বড় প্রেরণা। আমরা সবাই তাই কায়মনোবাক্যে জয় চাই। কিন্তু ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা। কাগজে-কলমে শক্তিতে যে পাকিস্তান অনেক এগিয়ে। দুই দলই জেতার জন্যই নামে। একদল জিতবে, একদল হারবে। আজ যদি বাংলাদেশ হেরেও যায়, মাথা উঁচু করেই আমরা মাঠ ছাড়ব। আমরা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত ও বিশ্বকাপ রানার্সআপ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। কারও দয়ায় নয়, আমরা খেলে ফাইনালে উঠেছি। খেলার মাঠে কে চ্যাম্পিয়ন হবে, এটা আমাদের হাতে নয়। কিন্তু মাঠের বাইরে কে চ্যাম্পিয়ন হবে, এটা আমাদের হাতে। আমরা কীভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি? খেলায় জয়-পরাজয় আছে। ক্রিকেট খুব অনিশ্চিত খেলা। যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা স্পোর্টিংলি নেব, সুখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করব। আল্লাহ না করুন, বাংলাদেশ দল যদি খুব খারাপ করে, তাহলেও আমরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করব না। বোতল বা ঢিল ছুড়ে মারব না। দুয়ো ধ্বনি দেব না। মনে রাখতে হবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৫৮ করায় আমাদের মাথা হেঁট হয়নি, মাথা হেঁট হয়েছিল যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাসে একটা ঢিল পড়েছিল। গেইল সেটা টুইটারে পৃথিবীময় জানিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ যদি চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলেও আমরা বাঁধনহারা, আত্মহারা হব না। আমরা কাউকে রং দেব না, অপরিচিত জনকে তো নয়ই। গাড়ি ভাঙচুর করব না। আর কোনো নারীকে একটুখানিও অপমান করব না পথে, প্রান্তরে, প্রাঙ্গণে। আমরা জাতি হিসেবে যদি জয়ী হওয়ার যোগ্যতা না অর্জন করি, তাহলে জয় আমাদের কাছে কেন আসবে? এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন দেশ হওয়ার মতো পরিপক্বতা ও সভ্যতা-ভব্যতা আমাদের দেখাতে হবে। কোনো বিদেশি অতিথিকে আমরা যেন কথায়, কাজে, আচরণে আহত না করি। পাকিস্তানি সৈন্যরা ও নেতারা একাত্তরে এ দেশে যে অত্যাচার-নিপীড়ন করেছে, তা আমরা ভুলিনি, ভুলব না। কিন্তু খেলার ফলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা ১৬ ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই পরাজয়ের গ্লানি ক্রিকেটের জয় দিয়ে তারা মুছতে পারেনি, পারবেও না। কিন্তু তাই বলে আমরা স্বাগতিক হিসেবে কারও প্রতিই বিরূপ আচরণ প্রদর্শন করব না। বাঙালি আতিথেয়তার উত্কর্ষ দেখিয়ে পৃথিবীর সামনে আমরা প্রমাণ করব, আমরাই শ্রেষ্ঠ। আজ কোনো বাঙালি, কোনো বাংলাদেশি মাঠে পাকিস্তানি পতাকা দেখাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আফ্রিদি বলে চিত্কার করবে—এটাও হবে না। কিন্তু কোনো পাকিস্তানি বা বিদেশি বা অবাঙালি যদি পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে ঢোকে, আমরা তাকে সম্মান জানাব। আমরা ১০০ ওভারের খেলায় চ্যাম্পিয়নও হতে পারি, রানার্সআপও হতে পারি, কিন্তু স্বাগতিক হিসেবে, সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে আমরা যেন চ্যাম্পিয়ন হই। গত বিশ্বকাপে কিন্তু এই কথাটাই বারবার ফিরে এসেছে। এই দেশের দর্শকেরা চ্যাম্পিয়ন—বিদেশি গণমাধ্যমে লেখা হয়েছিল। আমরা, দর্শকেরা, সারা দেশের নাগরিকেরা যেন পরিমিতিবোধ বজায় রাখি। আমরা ক্রিকেটকে ভালোবাসি। আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমরা আমাদের ক্রিকেটারদের ভালোবাসি। ভালোবাসা থেকেই আসে দায়িত্ববোধ। জাতি হিসেবে আমাদের মাথা যেন উঁচু থাকে। সেটা কেবল মুশফিক, সাকিব, তামিম, মাশরাফি, নাসির, নাজমুলেরা করবেন, তা নয়, আমাদের প্রত্যেকের ওপরেই আজ সেই দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমরা যেন আমাদের নিজেদের দায়িত্বটুকুন পালন করি। Collected Articles বাংলা