উইকিলিকস সেনাপতি জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ Rumi, December 9, 2010 ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকিতে দ্বিতীয় অ্যাটম বোমাটি পড়ার পর সম্ভবত এতো বড় বিস্ফোরণ দেখেনি বিশ্ব। ছয় জনের একটি টিম গত কয়েক মাস যাবত ফাটিয়ে চলেছেন এই তথ্যবোমা। গোটা পৃথিবীতে মার্কিন দূতাবাসগুলোতে চলছে ব্যাপক রদবদল। এমনকি খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিনটনের ‘পদত্যাগ করা উচিৎ’ এমন সব অন্যায় আচরণ প্রকাশ করে দিয়েছেন যিনি, তার নাম- জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ, আর তার মাধ্যমটির নাম উইকিলিকস। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদ সাময়িকী টাইম এ বছরের পার্সন অফ দ্য ইয়ার-এর শর্ট লিস্টে রেখেছে তাঁকে। কেবল ২০১০ সাল নয়, তিনি হয়ে উঠতে পারেন এক দশকের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র। কে এই জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার পুরো নাম জুলিয়ান পল অ্যাস্যাঞ্জ। জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। তাঁর শৈশব কেটেছে সংগ্রাম করে। ১৩ বছর বয়সে মায়ের কাছ থেকে প্রথম কম্পিউটার উপহার পেয়েছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি বাবা হন। একটু বড় হবার পর শুরু করেন কম্পিউটার হ্যাকিং। তার সম্পর্কে বলা হয় তিনি এক সময়ের অন্যতম সেরা হ্যাকারও ছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন অ্যাস্যাঞ্জ। ১৯৯৫ সালে তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২৫টি হ্যাকিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সে সময় অল্পের জন্য হাজতবাস থেকে বেঁচে যান জুলিয়ান। গোপনীয়তা রক্ষার্থে খুব অল্প সময়েই বদলে যায় তার মোবাইল ফোন নম্বর আর বাসস্থানের ঠিকানা। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা কম্পিউটার হ্যাকার জুলিয়ানকে তার মা ক্রিস্টিন অ্যাস্যাঞ্জে নিজের ছেলেকে দোষী ভাবতে নারাজ। নিজেকে সাংবাদিক, প্রকাশক ও উদ্ভাবক মনে করেন অ্যাস্যাঞ্জ। তিনি বলেন, ‘আমি এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি যা গণমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ সমস্যার সমাধান করবে।’ যেভাবে কাজ করে উইকিলিকস গোটা বিশ্বের স্বেচ্ছাসেবীদের বানানো অনলাইন এনসাইক্লেপিডিয়ার নাম উইকিপিডিয়া। একই পথ ধরে গোটা বিশ্বের স্বেচ্ছাসেবীদের দেয়া গোপন তথ্যের ভাণ্ডারটির নাম দেয়া হয় উইকিলিকস। এর ওয়েবসাইটটিও উইকিপিডিয়া আদলেই তৈরি। উইকিলিকসে কাজ করেন ছয়জন পূর্ণকালীন স্বেচ্ছাসেবী। ওয়েবসাইটটির রয়েছে প্রায় এক হাজার এনক্রিপশন বিশেষজ্ঞ। অ্যাসাঞ্জ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষা করার তাড়নাই তাঁর প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাঁর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘সরকারের স্বচ্ছতা দুর্নীতি হ্রাস করে’। গোপনীয় নথি জোগাড় করার উৎসের সন্ধান হিসেবে উইকিলিকস জানিয়েছে, কিছু সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তাই এ কাজে তাদেরকে সাহায্য করছেন। অলাভজনক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘উইকিলিকস'। সূত্র উল্লেখ না করে গোপন তথ্য প্রকাশ করাই এর কাজ। তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে জবাবদিহিতাকে শক্তিশালী এবং সরকারের কাজে স্বচ্ছতা আনার লক্ষে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে সাইটটি। ৪০ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী এবং প্রায় ৮শ কর্মী উইকিলিকসের যাবতীয় কাজ করছে। ৫ ডিসেম্বর রোববার সর্বশেষ তথ্য ফাঁসের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জুলিয়ান বলেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনীর জবাবদিহিতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেখানেও কিছু ভালো লোক রয়েছেন, যারা চান তথ্য অন্য কোনো উপায়ে প্রকাশ পাক এবং সেজন্য তারা আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ করছে, সাবেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা ব্র্যাডলি ম্যানিং রয়েছেন এর পেছনে। বলা হচ্ছে, বিখ্যাত গায়িকা লেডি গাগার সিডি থেকে গান মুছে সেখানে গোপন বার্তাগুলো তুলে নেন ওই সেনা। আর সেগুলোই পৌঁছে যায় উইকিলিকসের ভাণ্ডারে। পাল্টা হামালার শিকার উইকিলিকস উইকিলিকসে তথ্য ফাঁসের ঘটনার পরপরই তাদের ওয়েবসাইট অ্যাকসেস করা ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টা হয়। উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের সাইট থেমে থেমে সমস্যার মধ্যে পড়েছে। একটি সমস্যা তৈরি করা হয় পরিকল্পিতভাবে একত্রে অগণিত হিট করার মাধ্যমে। এতে সাইটটি দেখা সাময়িকভাবে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর স্পর্শকাতর কূটনৈতিক নথি দেখার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর অধিকার সীমিত করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। একের পর এক মার্কিন সরকারি অফিসে বন্ধ করা হয়েছে এ সাইটটি দেখার সুযোগ। ৭ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে ধরা দিয়েছেন জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ। আগে থেকেই দর কষাকষির মাধ্যমে কেবল সুইডেনে জারি হওয়া যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাজ্য। এর সঙ্গে তথ্য বোমার কোনো সম্পর্ক নেই বলেই জানা গেছে। এর আগে ওয়েব সার্ভার অ্যামাজন থেকে উইকিলিকসের ডোমেইন ব্লক করে দেয়া হয়েছিল। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়া সাইটটি। কিন্তু মাত্র ছয় ঘন্টার মধ্যেই সুইজারল্যান্ডের ওয়েব ঠিকানা থেকে নতুনভাবে আবারও আত্মপ্রকাশ করে সাইটটি। বন্ধ করে দেয়া হয় সেই সাইটটিও। এর পরে নেদারল্যান্ড থেকে আবারো চালু করা হয় সাইটটি। অ্যামাজন তাদের ওয়েব সার্ভার থেকে উইকিলিকসের অ্যাক্সেস বন্ধ করেছিলো ২ ডিসেম্বর বৃহষ্পতিবার। যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই অ্যামাজন উইকিলিকসের সাইট বন্ধ করেছিলো এমন অভিযোগ নাকচ করেছিলো অ্যামাজন। ক্রমাগত হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছে অ্যামাজন এবং উইকিলিকস যেন ব্যবহার করা না যায় এজন্য ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অফ সার্ভিস (ডিডিওএস) আক্রমণের কথা অস্বীকার করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। অ্যামাজন জানিয়েছিল, উইকিলিকস শর্ত না মানার কারণেই তারা বন্ধ সাইটটি বন্ধ করে দেয়। পাল্টা হুমকি দিয়েছে উইকিলিকস বিভিন্ন দেশের গুমর ফাঁস করলেও অ্যাস্যাঞ্জ নিজে রয়েছেন মারাত্মক হুমকির মুখে। গ্রেপ্তারের মুখে থাকলেও উইকিলিকসের সাইটে বিভিন্ন সময় ফেটেই চলেছে তথ্যবোমা। সেখানে লেখা রয়েছে যতোই আঘাত আসুক আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে উইকিলিকস। অ্যামাজন থেকে সার্ভার বন্ধ হলেও ভিন্ন তিনটি দেশ থেকে নতুন করে সাইটটির নথি প্রকাশ হচ্ছে। অ্যাস্যাঞ্জও হুমকি দিয়েছেন তাকে গুপ্তহত্যা করা হলে আরো স্পর্শকাতর নথি প্রকাশ পাবে । ইকুয়েডরের মতো দেশ আস্যাঞ্জকে নিরাপত্তা দিতে এবং নাগরিকত্ব দিতে রাজি হয়েছে। রাশিয়াকে মাফিয়া রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা, যুক্তরাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, পাকিস্তানের ওপর সৌদি প্রভাব, ভারতীয় নেতাকে হত্যা চেষ্টা এমনকি বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম চলছে এমনও তথ্য উইকিলিকসের কাছে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কি বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে উল্লেখ আছে, মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের নির্ভয়ে ওয়াশিংটনে সাদাসিধে ভাষায় এ ধরনের বার্তা পাঠাতে পারা উচিত। হিন্দুস্তান টাইমস এর বরাতে জানা গেছে, জুলিয়ানকে শাস্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে বড় বাধা তাদের সংবিধান। সংবিধানে বাক স্বাধীনতার পাশাপাশি রয়েছে তথ্য অধিকারের ধারা, যার মূল বক্তব্য হলো, নিজস্ব মত প্রকাশের পাশাপাশি যে কোনো সরকারি তথ্য জনগণের সম্পত্তি। যে কেউ এ তথ্য পেতে পারে। আর এতেই বেঁধেছে বিপত্তি। ফলে সংবিধান অনুসারে জুলিয়ানকে আটক করতে বেগ পেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তাই কোনো না কোন উপায় খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আইনজীবীরা এখন দিনরাত সংবিধান, বিধি, ধারা ইত্যাদি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। আইনের ফাঁক খুঁজে জুলিয়ানকে ধরা হবে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল এরিক হোন্ডার। তথ্য ফাঁসে বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আড়াই লাখেরও বেশি গোপন নথি প্রকাশ শুরু করার পর থেকে সে দেশের কূটনীতিকদের জটিল পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে উইকিলিকস। উইকিলিকসের একটি লিংকে জানানো হয়েছে, সেক্রেটারি অফ স্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) হিলারি ক্লিনটন জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের টেলিফোন ও ই-মেইল নম্বর এবং ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য (অন্যায়ভাবে) জানতে চেয়েছেন। এর ফলে হিলারীর পদত্যাগের দাবীও উঠেছে। উইকিলিকসের নথির তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশে সব মার্কিন মিশনকে ওই সব দেশের এমন সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এই তালিকায় তেলের পাইপলাইন, যোগাযোগ ও পরিবহনবিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। রয়েছে যুক্তরাজ্যের কিছু কেবল লোকেশন ও স্যাটেলাইট সাইট এবং টিকা তৈরি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএই সিস্টেমসের নাম। তালিকায় জিবুতির জাহাজ চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সব লেন এবং মিসরের সুয়েজ খালের জাহাজ টার্মিনাল ও ইরাকের বসরার তেলের টার্মিনালের নাম রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নাম। অ্যাস্যাঞ্জ জানিয়েছেন, জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন কূটনীতিকদের গোয়েন্দাগিরির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনুমোদনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাঁরও পদত্যাগ করা উচিত। গত রোববার ৫ ডিসেম্বর স্প্যানিশ পত্রিকা এল পাই-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এখানেই শেষ নয় উইকিলিকস-এর অন্যতম সমর্থক পত্রিকা বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের অনলাইন সংস্করণে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে অ্যাস্যাঞ্জ জানিয়েছিলেন, ‘জীবনের হুমকির বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা আগে থেকেই এমন ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে যে কোনো পরাশক্তির বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষার চেষ্টা করা যায়।’ অ্যাস্যাঞ্জ বা উইকিলিকসের কর্মীদের হত্যা বা গ্রেপ্তার করা হলে তাদের প্রকাশ করা কূটনৈতিক নথির কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, ‘কেবলগেট আর্কাইভের এসব নথি এখন আর উইকিলিকসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ‘এনক্রিপটেড’ অবস্থায় এসব তথ্য এরই মধ্যে এক লাখ লোকের কাছে পৌঁছে গেছে। আমরা না থাকলেও তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকাশিত হতে থাকবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এমন ব্যবস্থা নেয়া আছে যাতে আমাকে মেরে ফেললে বা এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা উইকিলিকসের বিরুদ্ধে নেয়া হলে আরও এক লাখ ‘গোপনতম’ ফাইল স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রকাশিত হয়ে পড়বে’। ২১৮২ ফাইল নিয়ে বাংলাদেশের রোল নম্বর ৩৭ জানা গেছে, ওয়েবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ গোটা বিশ্বের যে আড়াই লাখ নথি ফাঁস করার মিশনে নেমেছে, তার মধ্যে দুই হাজার ১৮২টি ফাইল বাংলাদেশবিষয়ক। এতে আরো বলা হয়, ১৯৬৬ সাল থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেশটির ২৭৪টি দূতাবাসের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া নথি ওয়েবসাইটটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। তবে উল্লেখযোগ্য নথিগুলোর উৎস দেখানোর জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত লেখচিত্রে (গ্রাফ) ৪৫টি দূতাবাস স্থান পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৩৭ নম্বর অবস্থানে আছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। ঠেকানোর নানা উপায় : সবার আগে বন্ধ আর্থিক ক্ষমতা সুইজারল্যান্ডের পোস্ট অফিস ব্যাংক ও পোস্ট ফিন্যান্স ৬ ডিসেম্বর অ্যাস্যাঞ্জের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। এর ফলে তাঁর ৩১ হাজার ইউরোর সমপরিমাণ সম্পদ জব্দ হয়েছে। এছাড়াও পেপল অ্যাকাউন্ট থেকে উইকিলিকসের যাবতীয় লেনদেনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সমালোচনার উর্ব্ধে নন অ্যাস্যাঞ্জ অ্যাস্যাঞ্জের সাংবাদিক পরিচয় নিয়ে বেশ সন্দেহই রয়েছে বিশেষজ্ঞদেও ভেতরে। উইকিলিকসের মুখপাত্র শুধু তিনি নিজে। আর যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ওয়েবসাইটটিতে যেসব নথিপত্র প্রকাশ করা হয়, তা সব সময় হুবহু প্রকাশ করা হয় না। ২০০৭ সালে বাগদাদে মার্কিন হেলিকপ্টার হামলায় প্রাণহানির যে ভিডিওচিত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল তা ছিল কিছুটা সম্পাদিত। হেলিকপ্টার থেকে যাদের ওপর হামলা চালানো হয় তাদের একজনের হাতে ছিল রকেটচালিত গ্রেনেড লঞ্চার। উইকিলিকসে প্রকাশিত চিত্রে ওই লোকের ছবি বাদ দেওয়া হয়। অনেকেই অ্যাস্যাঞ্জের কাজের পদ্ধতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রিপোর্টার্স কমিটি ফর ফ্রিডম অফ দ্য প্রেসের নির্বাহী পরিচালক লুসি ডালগ্লিশ বলেছেন, ‘এটা সাংবাদিকতা নয়, এটা হচ্ছে তথ্য বিতরণ।’ অ্যাস্যাঞ্জও জবাব দিয়েছেন এর। তাঁর মতে, ‘আমি সাংবাদিক কি-না তাতে কী আসে যায়, এগুলো এমন সব তথ্য যা জানার অধিকার সবার রয়েছে’। গ্রেপ্তার অ্যাসেঞ্জ, তার পর কী? টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ৭ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ব্রিটিশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা জানিয়েছিলেন অ্যাস্যাঞ্জ। তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছিলেন সুইডেনের দুই নারী। তবে, বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। সুইডেনের দুই নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৯ নভেম্বর (তথ্য প্রকাশিত হবার পরপর) সুইডেনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ‘ইন্টারপোল' অ্যাস্যাঞ্জকে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা চেয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে। অভিযোগ বিষয়ে অ্যাস্যাঞ্জের বক্তব্য, উইকিলিকসের তৎপরতা বন্ধের জন্য পশ্চিমারা তাকে ফাঁসিয়েছে। এদিকে, যৌন নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পাননি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। সুইডেনের উচ্চ আদালত বৃহস্পতিবার তার আপিলের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। যাইহোক এখন প্রশ্ন হচ্ছে- বিভিন্ন দেশের সরকারের তথাকথিত ‘গোপন’ তথ্য এবং সাধারণ লোকের তথ্য জানার তথাকথিত অধিকার- এ দুইয়ের মধ্যে কে জিতবে? বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/মিন্টু/এইচবি/এইচআর/ডিসেম্বর ০৭/১০ Collected Articles