ক্লাউড হোস্টিং ও ডেটা সেন্টারে দেশীয় উদ্যোগ Rumi, November 9, 2024 বর্তমানে অনলাইনের এই যুগে সবকিছু আমরা ক্লাউডে হোস্ট করে থাকি। এর আগে হোস্টিংয়ের জন্য সাধারণত সার্ভার ভাড়া নিয়ে সেখানেই হোস্ট করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন হোস্টিংয়ে অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে ক্লাউডের বিকাশ ঘটে। আইটিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন– মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, ওরাকল তাদের নিজস্ব ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে। ওরাকলের মূল বিজনেস ছিল ডেটাবেজ; অ্যামাজনের মূল বিজনেস ছিল ই-কমার্স; গুগলের ছিল সার্চ ইঞ্জিন ও ই-মেইল সার্ভিস এবং মাইক্রোসফটের ছিল বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সলিউশন। শুরুর দিকে তারাও নিজেদের সিস্টেম বিভিন্ন ডেটা সেন্টারে হোস্ট করত। একসময় হয়তো তারা চিন্তা করল, অন্যদের থেকে সার্ভার ভাড়া করার দুটি চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, খরচ বাড়ে; দ্বিতীয়ত, সিস্টেমকে অপটিমাইজভাবে হোস্ট করার জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা থাকে। তবে এসব শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম সহসা গড়ে ওঠেনি। এসব ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠার পেছনে ভিন্ন রকমের গল্প রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এসব প্রতিষ্ঠান শুধু নিজেরাই এই ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করে না, বরং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছেও বাণিজ্যিকভাবে ক্লাউড সেবা বিক্রি করে। উল্লেখ্য, ক্লাউডের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি হিসেবে এজ কম্পিউটিংকেও ধরা হচ্ছে, যা কিনা বর্তমানে খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ক্লাউড সার্ভিসের বিশ্বব্যাপী বাজার সাইজ হলো ৬০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং বর্তমানে এ মার্কেটে অ্যামাজন ৪০ শতাংশের বেশি বাজার দখল করে আছে। এই প্রযুক্তির সুবিধা ও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করলে বোঝা যায়, ক্লাউড হোস্টিং শুধু বড় ধরনের বাজার তৈরি করছে না; পাশাপাশি ইনোভেশনের জন্য এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। তাই এ জায়গায় বাংলাদেশকেও নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। মাদের দেশে বর্তমানে ক্লাউড স্টোরেজের বাজারের আকার ২০০-২৫০ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০-৬০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারের অর্ধেকেরও বেশি অংশ বিদেশিরা দখল করে আছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের মাত্র ১০ শতাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। সে তুলনায় ভারতের ক্লাউড বাজারের আকার ৫-৬ হাজার কোটি টাকা। এ থেকে বোঝা যায়, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্লাউড স্টোরেজ খাতে প্রবেশ এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে। বাংলাদেশ থেকে যত ওয়েবসাইট ও অনলাইন সেবা আপলোড হয়, সেটা কোনো না কোনোভাবে দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে সার্ভার ভাড়া করে কিংবা ক্লাউডে হোস্ট করা হয়। দেশের বাইরে যখন রাখা হয় তখন ডেটার সার্বভৌমত্ব যেমন প্রশ্নের মুখে পড়ে, তেমনি এদেরকে সেবার বিপরীতে বিল পরিশোধ করতে হয় বিদেশি মুদ্রায়। এই বিষয় মাথায় রেখে প্রাইভেট সেক্টরে অনেকে সার্ভার ভাড়া কিংবা ছোট পরিসরে ক্লাউড সেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি সরকারও এই খাতকে এগিয়ে নিতে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার এবং কালিয়াকৈরে অবস্থিত বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের ফোর-টায়ার ডেটা সেন্টার। তবে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে সরকারের এসব উদ্যোগে স্থানীয় ইনোভেশন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা গেলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য তা হবে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সরকারি ডেটা সেন্টারগুলোর উদ্যোগ ভালো হলেও এর কার্যকর ব্যবস্থাপনায় কিছু গুরুতর সীমাবদ্ধতা আছে। এসব ডেটা সেন্টার তৈরির সময় বিদেশি ঋণ ব্যবহার করে অবকাঠামো নির্মাণ এবং ক্লাউড সেবা পরিচালনার দায়িত্বও বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। কেবল ক্লাউড সেবা পরিচালনা নয়; আন্তর্জাতিক বিদেশি ক্লাউড সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ক্লাউড সেবা বিক্রি অথবা পুনঃবিক্রির মাধ্যমে পরিচালনায় অধিকতর আগ্রহী, যেখানে স্থানীয় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের তেমন অংশগ্রহণ নেই এবং স্থানীয় মানবসম্পদ উন্নয়নের সুযোগ নেই। ফলে এ খাত আশানুরূপ বিকশিত হতে পারছে না। বর্তমান উদ্যোগের সমস্যা হলো উচ্চ ব্যয়। সরকার ২০০ কোটি টাকার বিনিময়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ক্লাউড সেবা পরিচালনার জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে। প্রশ্ন আসতে পারে, বাইরের ক্লাউড সার্ভিস রান করাতে আমাদের জন্য অসুবিধা কী? অসুবিধা হলো, যে টাকায় বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে, সেই টাকার বিনিময়ে যে সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে, একই রকম সার্ভিস দেওয়ার সক্ষমতা লোকাল জনবলেরই ছিল। তারপরও আমরা বিদেশি কোম্পানিকে দিয়েছি। অথচ এই সেবা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অনেক কম খরচে পাওয়া সম্ভব ছিল। সরকারি ডেটা সেন্টারে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর জন্য ক্লাউড ইকোসিস্টেম তৈরি করার সুযোগ দিতে হবে। প্রাইভেট খাতের উদ্যোক্তারা এতে স্টার্টআপ চালু করে ক্লাউড, সাইবার সিকিউরিটি ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ শুধু ইনোভেশনের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়; এটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে দুর্নীতি হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের এসব ডেটা সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় উদ্যোগগুলোর জন্য ক্লাউড সেবা পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। এতে স্থানীয় স্টার্টআপগুলো আরও উন্নত এবং সাশ্রয়ী সেবা নিয়ে আসতে পারবে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্লাউড ও ডেটা সেন্টার খাতে দেশের উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানচিত্রে আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে। নিটন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: তথ্যপ্রযুক্তিবিদ Collected Articles Uncategorized Thoughts বাংলা