ঘুরে আসুন গেম রিজার্ভ Rumi, March 29, 2011 কক্সবাজার জেলার টেকনাফে অবস্থিত দেশের অন্যতম একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল 'গেম রিজার্ভ'। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশে হোয়াইখিয়ং বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলের শুরু। নানান বৈচিত্র্যে ভরপুর সংরক্ষিত এ বনাঞ্চল থেকে ঘুরে আসতে পারেন এই সময়ে। একনজরে গেম রিজার্ভ টেকনাফ উপজেলায় প্রায় ১১৬১৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত গেম রিজার্ভ। মূলত বন্য হাতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৮৩ সালে এ বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশের বন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ বনের সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে 'নিসর্গ নেটওয়ার্ক'। সমুদ্র উপকূলবতর্ী পাহাড়ি এ বনে রয়েছে প্রায় ২৯০ প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ। এ বনের উলেস্নখযোগ্য গাছ হলো চাপালিশ, গর্জন, শিমুল, উরিআম, অশোক প্রভৃতি। এ ছাড়া এ বনে ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৩ প্রজাতির উভচর ও প্রায় ২৮৬ প্রজাতির পাখির বসবাস রয়েছে। তবে এ বনের মূল আকর্ষণ বন্য হাতি। তবে সেটার দেখা মেলা ভাগ্যের ব্যাপার। এ বনের আশপাশে রাখাইন, মারমা ও চাকমা আদিবাসীদের বসবাস। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সুন্দরবন ও পাবলাখালী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পরেই এর স্থান। গেম রিজার্ভে তিনটি বিশেষ দ্রষ্টব্য এলাকা আছে। কুদুং গুহা ট্রেইল হোয়াইখিয়ং বাজার থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পশ্চিমে হরিখোলায় কুদুং গুহা ট্রেইল অবস্থিত। ট্রেইলের শুরুতে গাড়ি রেখে পাহাড়ি পথে সামনে দুই কিলোমিটার হেঁটে গেলে দেখা মিলবে বিশাল একটি গুহা। উঁচু পাহাড়ের গায়ে বড় আকৃতির এ গুহাটির নাম কুদুং গুহা। এর আরেক নাম বাদুর গুহা। এর অভ্যন্তরে গেলে হাজারো বাদুড়ের কিচিড় মিচির শোনা যাবে। গুহার ভেতরটা কিন্তু বেশ অন্ধকার। এর বেশি ভেতরে না যাওয়াই ভালো। তৈংগা পাহাড় ট্রেইল প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় তৈংগা টেকনাফের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে একদিকে নাফ নদী আরেক দিকে দেখা মেলে বঙ্গোপসাগরের। টেকনাফের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ট্রেইলে ভ্রমণ করা যায়। এর সবচেয়ে বড় ট্রেইলটি ধরে টেকনাফের হ্নীলা থেকে শাপলাপুর সমুদ্র সৈকতে চলে যাওয়া যায়। তবে পাহাড়ি পথটি খুবই দুর্গম আর যেতে সময় লাগে পুরো দিন। টেকনাফ নেচার পার্ক টেকনাফ শহর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার উত্তরে দমদমিয়া নামক জায়গায় টেকনাফ নেচার পার্ক। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাবার পথে এটি নয় কিলোমিটার আগে পড়বে। এখানে তিনটি পায়ে হাঁটা পথ রয়েছে। এ পথগুলোতে হেঁটে হেঁটে উপভোগ করা যাবে গেম রিজার্ভের বৈচিত্র্যময় জগত। টেকনাফ নেচার পার্কে রয়েছে একটি স্টুৃডেন্ট ডরমিটরি, গেম রিজার্ভে ভ্রমণে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে রাত যাপনের সুযোগ পাবেন নির্ধারিত ভাড়ায়। এ ছাড়া এখানে রয়েছে একটি প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র (নেচার ইন্টারপ্রিটিশন সেন্টার), টু্যরিস্ট শপ ইত্যাদি। কীভাবে যাবেন ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফের বাসে এসে নামতে হবে হোয়াইখিয়ং বাজার। সেখান থেকে গেম রিজার্ভের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের জন্য জিপ ভাড়া পাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যায় সেন্টমার্টিন পরিবহন (০২-৯৩৪৩২৩০), শ্যামলী পরিবহনের (০২-৯১৪১০৪৭) এসি বাস। ভাড়া ৯০০-১১৫০ টাকা। এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০২-৯১৩৫০১৮), শ্যামলী পরিবহন (০২-৯১৪১০৪৭), এস আলম (০২-৯৩৩১৮৬৪), সৌদিয়া পরিবহন (০২-৯৩৩৮৫১০) ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৫৫০-৬০০ টাকা। এ ছাড়া সড়কপথে ও আকাশ পথে সরাসরি কক্সবাজার এসে সেখান থেকেও সহজেই আসা যায় হোয়াইখিয়ং বাজার। কক্সবাজার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় টেকনাফের বাস ছাড়ে। এসব বাসে হোয়াইখিয়ং বাজারের ভাড়া ৬০-৮০ টাকা। কোথায় থাকবেন টেকনাফে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল নেটং (০৩৪২৬-৭৫১০৪, নন এসি দ্বৈত কক্ষ ১৫০০ টাকা, এসি দ্বৈত কক্ষ ১৮০০ টাকা)। এ ছাড়া টেকনাফ শহরে হোটেল নাফ কুইন (০১৮১৯-০৮৫২৮৫, ভাড়া ২০০-৬০০ টাকা)। হোটেল দ্বীপ পস্নাজা (০১৮১৭-৭০৬৭৯০, কক্ষ ভাড়া ২৫০-৬৫০ টাকা)। হোটেল হিলটপ (০১৮১৯-০৭৩৮০২)। কিছু তথ্য গেম রিজার্ভের তৈংগা পাহাড় খুবই দুর্গম। আর এ বনের অন্যতম বাসিন্দা বন্য হাতি। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবেই নিসর্গ নেটওয়ার্ক প্রশিক্ষিত ইকো গাইড ছাড়া গেম রিজার্ভে ভ্রমণে কিংবা ট্রেকিং-এ যাওয়া উচিত নয়। পর্যটকদের সুবিধার্থে এ রকম কয়েকজন ইকো গাইডের নাম দেওয়া হলো। সাইফুল ইসলাম, হোয়াইখিয়ং; (০১৮১১১১১৪৬৮); জাহাঙ্গীর আলম, হোয়াইখিয়ং (০১৮১৮০১০৮২১); ইদ্রিস, হোয়াইখিয়ং (০১৭২২৪৭৪১৩৯); পপি বড়-য়া, হোয়াইখিয়ং (০১৮১৩৩১৬৪০৯); কবির আহমেদ, দমদমিয়া (০১৭১০৯৩৯৩৭০); জুয়েল, দমদমিয়া (০১৮১৪৯৬৬১২৮); জোবায়ের, দমদমিয়া (০১৮১২৭৯১৪৪০); সাজ্জাদ হোসেন, শিলখালী (০১৮১৫১৩৮০৭৩)। Travel বাংলা