আব্বা- আনিসুল হক Rumi, June 16, 2013 আব্বা মারা গেলেন যখন, তখন আমি বুয়েটে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। সেকেন্ড সেমিস্টার পরীা চলছিল। স্কুল-কলেজের অভ্যাসবশত আমি খুবই মন দিয়ে পড়ছিলাম, যদিও ফার্স্ট সেমিস্টারে রেজাল্ট ভালো হয়নি তেমন। সামনে ফিজিক্স পরীা। মধ্যখানে কয়েকদিনের বিরতি। সন্ধ্যার সময় শহীদ স্মৃতি হলের টিভি রুমে বসে আছি বন্ধুদের সঙ্গে, রেসলিং দেখাচ্ছিল, আমি রেসলিংয়ের ভক্ত ছিলাম না, কিন্তু বন্ধুরা দেখছে বলে আমিও টিভি রুমের ভিড়ে যোগ দিয়েছি। এই সময় মামা এলেন হলে। ডেকে বললেন, রংপুর যাচ্ছি অফিসের কাজে, তুই যাবি? আমি বললাম, পাগল, আমার তো পরীা। মামা বললেন, তোর বাপের খুব অসুখ বাহে, গেলে চল। আমি বললাম, যাব। আমার মেজভাই, আশরাফুল হক তখন বুয়েটে ফোর্থ ইয়ারে, তার পরীা একদিন পরে, তিনি যেতে পারবেন না, আমি রাতের বেলা বিআরটিসি বাসের শেষ আসনে বসে যাচ্ছি রংপুর। সঙ্গে মামা এবং মামি। রাতের বেলা, যখন বাসের মধ্যে ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ জেগে নেই, আমার মনে প্রশ্ন জাগল, পরীার মধ্যে আমি রংপুর যাচ্ছি কেন? তার একটাই মানে, আব্বা বেঁচে নাই। আমি হু হু করে কাঁদতে লাগলাম। এত কান্না। এত কান্না। ভোরবেলা নামলাম রংপুর শহরে। রিকশা নিয়ে যাচ্ছি, পাড়ার চায়ের দোকানগুলো সবে খুলছে, কেরোসিনের চুলায় পাম্প করছে দোকানিরা, জানুয়ারি মাস, খুব শীত আর খুব কুয়াশা, রাত্রি-চর রিকশাওয়ালারা হুড তুলে চাদর মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি হয়ে রিকশার যাত্রী-আসনেই বসে আছে, বাড়ি ফেরার সরু রাস্তার ওপরে দুপাশের বাড়ির দেয়াল টপকে আছড়ে পড়ছে কামিনি ফুলের ঝাড় আর কুয়াশায় ভাসছে কামিনি ফুলের সাপ ডেকে আনা মাদকতাময় গন্ধ। আমি বাড়ি ফিরছি, সবাই আমার দিকে করুণ চোখে তাকাচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি, ওরা বলছে, মরহুমের আরেকটা ছেলে ফিরল। বাড়ি গিয়ে দেখি, বাড়ি ভর্তি মানুষ। জিগ্যেস করি, আব্বা কোন ঘরে? বড় ভাইয়ের ঘরে আব্বাকে শুয়ে রাখা হয়েছে। আমি কাঁদছি না। সবাই বিস্মিত। বাবা মারা গেছে, ছেলেটা কাঁদছে না কেন? আমি কী করে বোঝাব, সারারাত আমি কেঁদেছি। গত বছরও আমি আমার আব্বার কথা মনে করে কেঁদেছি। তার মৃত্যুর ২৮ বছর পরেও। আব্বার অকাল মৃত্যু আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। যাই হোক, কুলখানি শেষে ঢাকা ফিরলাম। ফিজিক্স পরীা দিতে গেলাম। ফার্স্ট সেমিস্টারে ১০০ তে ৭৮ পাওয়া ছিল। সেকেন্ড সেমিস্টারে আর দুই পেলে পাস। একটা অংক করে খাতা জমা দিতে গেলাম। স্যার বললেন, এক ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। এক ঘণ্টা কোনো কাজ ছাড়া বসে থাকা যায়? এক ঘন্টা পর বেল বাজল, খাতা জমা দিয়ে চলে এলাম, আমার আশে-পাশে সবাই ভালো ছাত্র, এ সেকশনের, তারা বিস্ময়ের সঙ্গে ল করল, একটা পাগল হল ছাড়ছে। কিংবা লই করল না। আমার বুয়েটের ভাগ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং ভবিষ্যৎ স্থির হয়ে গেল। আমার আব্বা, অন্য সব বাবাদের মতোই, ছিলেন একজন অদ্ভুত মানুষ। ছোটবেলায় আমরা বিশ্বাস করতাম, আব্বা সকালবেলা ফজরের নামাজ পড়ে মর্নিং ওয়াক করতে গেলে পুকুরের পাড়ে দুজন জিন উড়ে উড়ে যেতে যেতে তাঁকে সালাম দিয়েছিল। আর একবার, আব্বা একটা দাওয়াত খেয়ে দলে-বলে ফেরার সময় স্টেশনে ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছিল। আব্বারা ট্রেন থামাইবার দোয়া পড়লেন। অমনি ট্রেন থেমে গেল। আব্বা বলতেন, শিশুকে প্রকৃতির বুকে ছেড়ে দাও। প্রকৃতিই তাকে শিা দেবে। আব্বা যে পিটিআইয়ে শিশু-মনোবিজ্ঞান পড়াতেন। তিনি ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, আমার ছেলেমেয়েদের কেউ মারতে পারবে না। আব্বার প্রিয় ছিল রংপুর বেতারে ভাওয়াইয়া সংগীতের আসর, তিস্তা পাড়ের গান, বিকাল সাড়ে চারটায়। হরলাল রায় আর শরিফা ছিলেন তাঁর প্রিয় ভাওয়াইয়া গায়ক। আব্বা গল্প করতেন, বাবা, তোমরা তো কিছু খেতে পারলা না। আমাদের গ্রামের নদীতে পোলো ফেলা হতো, একেকটা মাছ উঠত তোমার চেয়ে লম্বা। আমাদের মছ খাওয়াতে না পারার সেই দুঃখ আব্বা মোচন করার চেষ্টা করতেন গোটা গোটা ইলিশ মাছ কিনে এনে। তখন মাঝে মধ্যে রংপুরের বাজারে ইলিশ মাছ খুব সস্তা হয়ে যেত। আব্বা এক জোড়া ইলিশ কিনে এনে বলতেন, রাতেই রাঁধো। মরি কি বাঁচি বলা তো যায় না। আমাদের বাসায় মেহমান লেগেই থাকত। একটা মুরগি ১২ টুকরা করতে হতো। আব্বা যখন রিটায়ার করলেন, তখনও বড় ভাই ইন্টার্নি করছেন। আমরা, বাকি ৪ জন, ভাইবোন ছাত্র। টানাটানির সংসার। আমরা ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম, সেই বৃত্তির টাকাতেই পড়ার খরচ নির্বাহ করার চেষ্টা থাকত! আব্বা বলতেন আম্মাদেরকে, এই দিন তো থাকবে না, ছেলেমেয়েরা বড় হলে দেখো কী রকম দিন আসে। কত শাড়ি পাবা! বড়ভাই ডাক্তার হওয়ার আগেই আব্বা মারা গেলেন। কিছুই দেখে যেতে পারলেন না। তার দুই ছেলেমেয়ে ডাক্তার হয়েছে, দেড়জন ইঞ্জিনিয়ার, আরেকজন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ। আমার বৃদ্ধ আব্বাকে সাইকেল চড়তে হতো। বড়ভাই রাগারাগি করতেন। আব্বা, সাইকেলে চড়েন কেন? আমার আব্বা কেন এত তাড়াতাড়ি মারা গেলেন। আল্লাহর কাছে এই অনুযোগ আমাদের যায় না। ২৮ বছর পরেও না। অথচ যখন ছোট ছিলাম, আব্বাকে আমার মনে হতো, বেশি সরল মানুষ। রাস্তার লোককে ডেকে ডেকে বলতেন, শুনেছেন, আমার বড় ছেলেটা অমুক করেছে, ছোট ছেলেটা এই করেছে। তখন ভারি সংকোচ হতো, নিজের ছেলেমেয়েদের কথা এইভাবে কেউ বলে বেড়ায়? আজ আমিও তো আমার মেয়েকে নিয়ে বলি। ভাস্তে-ভাস্তিদের নিয়ে গর্ব করি। এখন আর নিজের বোকামো নিয়ে সংকোচ লাগে না। হয়তো ওদের লাগে। কী আশ্চর্য, প্রকৃতি একই চক্রে ঘোরে, আমাদেরকে ঘোরায়। একই পরিস্থিতি বার বার ফিরে আসে। হয়তো নিজে বাবা হওয়ার আগে বোঝাও যায় না, বাবা জিনিসটা কী রকম? Related Uncategorized Thoughts বাংলা
World Media Coverage on the Launcing of Doel Laptop February 20, 2012 Just keeping a repository of this wonderfully compiled document by Apurba. World Media Coverage on the Launcing of Doel Laptopv Related Read More
২৫ এর পর যা সত্যি June 6, 2014 বয়স কি পঁচিশ পেরিয়েছে? যদি আপনার বয়স পচিশ পার হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে ইতিমধ্যেই আপনি জেনে গিয়েছেন অনেকগুলো সত্য। যেই বিষয়গুলো আগে অর্থহীন মনে হতো অথবা তেমন একটা গুরুত্ব দিতেন না সেগুলোই হয়তো এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে। আবার যেগুলোকে জীবনের সবচাইতে জরুরি মনে হত এমন অনেক কিছুই হয়তো… Read More
Pause & Rethink September 27, 2009 Washington, DC Metro Station on a cold January morning in 2007. The man with a violin played six Bach pieces for about 45 minutes. During that time approximately two thousand people went through the station, most of them on their way to work. After 3 minutes a middle aged man noticed there was… Read More