পদ্মা সেতু বিতর্ক কি পূর্বপরিকল্পিত?

শুরুতে বলে নিই, আমার এই লেখা বিশ্বব্যাংক-পদ্মা সেতু বিতর্কে সরকারের পক্ষে কোনো সাফাই গাওয়ার জন্য নয়। আর সরকারের পক্ষে সাফাই গাইলেও তা কেউ শুনবে না। কারণ, বিশ্বব্যাংকের ঢোলের আওয়াজ অনেক বড় এবং সে ঢোলে যখন বিশ্বব্যাংক বাড়ি দেয়, তখন তা এ দেশের মানুষ অনেক বেশি শোনে। এ দেশের সাধারণ মানুষ তো বটেই, রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না বিশ্বব্যাংক আসলে কাদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং কোন কোন দেশ তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
বাংলাদেশের বহুপ্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির চেষ্টা হয়েছে—এ অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করবে না বলে সরকারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তারা এ দুঃসংবাদটি দিয়েছে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ব্যাপারে চুক্তি হওয়ার ১৪ মাস পর। ফলে সরকারের তো বটেই, দেশের ভাবমূর্তিরও বড় ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের যে অর্থ থেকে আপাতত বাংলাদেশ বঞ্চিত হলো, তা সহজ শর্তে ঋণ ছিল। একসময় দেশের জনগণকেই এই অর্থ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হতো। পুরো বিষয় নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে বেশ হইচই হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা এই ‘অপরাধ’-এর কারণে সরকারেরই পদত্যাগ দাবি করেছেন। এটিও একটি নজিরবিহীন ঘটনা। পাশের দেশ ভারতে এমন একটি ঘটনা ঘটলে বিরোধী দল আর সরকারি দল একসঙ্গে বসে একটি কর্মপন্থা ঠিক করার চেষ্টা করত। ঠিক একই অজুহাতে বেগম জিয়ার আগের সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংক একাধিক প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছিল; কিন্তু তা নিয়ে তেমন হইচই হয়নি। কারণ, সেসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দেয় অর্থের পরিমাণ অনেক কম ছিল। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেগম জিয়া ও তাঁদের সভা পারিষদেরা কয়েক দিন ধরে বলে আসছেন, তাঁরা ক্ষমতায় গেলে একটি নয় দুটি পদ্মা সেতু বানাবেন। রাজনীতিতে বাগাড়ম্বর বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, তবে তারও একটা সীমা থাকা উচিত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া, বিচারপতি সাত্তার এবং বেগম জিয়া বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তাঁরা কেন পদ্মার ওপর সেতু বানানোর চিন্তা করেননি, তা জনগণ জানে না। আর পদ্মার ওপর দুটি সেতুর আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তা অর্থনৈতিক ও কারিগরি সমীক্ষার ব্যাপার। যাক সেসব কথা।

Share