যুদ্ধ নয়, ‘শেষ’ হচ্ছে ইরাক! Rumi, July 9, 2014July 9, 2014 'যুদ্ধ' শব্দটা মনে হয় ইরাকের জন্যই প্রযোজ্য! ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার পর সামরিক-বেসামরিক মিলে জীবন গেছে প্রায় ৫ লাখ লোকের। আহত হয়েছে আরো অনেক যার সঠিক হিসাব নেই। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মার্কিন সৈন্য প্রাণ দিয়েছে এই যুদ্ধে। নিহতের তালিকায় আছে ব্রিটিশসহ আরো অনেক সৈন্য। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। উদ্দেশ্য ছিল ২০০৩ সালে ক্ষমতায় থাকা সাদ্দাম হোসেনকে উত্খাত করে নাগরিকদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক ইরাক ফিরিয়ে আনা। কিন্তু সেই আশা যেন সুদূরপরাহত। ২০১১ সালে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু সেই ইরাকে আবার মার্কিন সৈন্য। লড়াই চলছে সুন্নি-শিয়া-মার্কিন সৈন্যদের মধ্যে। বিদ্রোহীদের দমনে ইরাকে গেছে রুশ বিমানও। আবার সেই যুদ্ধ। বিশ্লেষকদের মতে, ইরাক যুদ্ধ হয়তো শেষ হবে না। কিন্তু ঠিকই শেষ হচ্ছে ইরাক। আদিকালের শত্রুতা: গত শতাব্দী ধরে পশ্চিমারা সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেছে। এজন্য তারা শাসককে বুঝতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমারা কী তাদের সংস্কৃতিকে বুঝতে চেষ্টা করেছে যেখানে ধর্মই সরকার, ধর্মগ্রন্থই আইন এবং অতীতই ভবিষ্যতের নির্ণায়ক। সুন্নি-শিয়া বিরোধ সৃষ্টি হয় ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর। সুন্নিরা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চান হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আদলে। আর শিয়ারা চান হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উত্তরাধিকারী এবং জামাতা ও খলিফা হযরত আলী (রা.) এর নীতিতে। শতাব্দী ধরে এই দুই সমপ্রদায় সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক ভিন্ন পরিচয়ে চলছে। বিশ্বে এখন ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মুসলমানদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান সুন্নিপন্থি। ৫শ' বছর ধরে অটোমন সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে পশ্চিমাপন্থি শাসক মোহাম্মদ রেজা শাহকে হটানোর পর ইরানে শিয়ারা ক্ষমতায় আসে। তারা মনোযোগ দেয় তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলের দিকে। ১৯৮৬ সালে শিয়াপন্থি জঙ্গি গ্রুপ হিজবুল্লাহ লেবাননের বৈরুতে মার্কিন নৌবাহিনীর ব্যারাকে বোমা হামলা চালিয়ে ২৪১ জনকে হত্যা করে। তখন থেকেই শিয়াদের মুখে জঙ্গির ছাপ পড়ে। ইরাকে শিয়াদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ইরানের শাসক আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনি ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আট বছর ধরে যুদ্ধ করে। আর ওই যুদ্ধে পশ্চিমারা ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পক্ষ নেয়। এমনকি সুন্নিদের প্রশিক্ষণও দেয়। এদের মধ্যে ওসামা বিন লাদেনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠানো হয় সোভিয়েত-বিরোধী লড়াইয়ে। এই লড়াইয়ে জয়ের পর লাদেন আল-কায়েদা নামের গ্রুপ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই অঞ্চল থেকে পশ্চিমাদের তাড়ানোর পরিকল্পনা করেন। বিশেষ করে সৌদি আরব, মিসর এবং জর্ডান থেকে যেখানে অত্যাচারী শাসককে পশ্চিমারা সমর্থন দিচ্ছে। তারা মুসলিম বিশ্বে সুন্নি আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে। তাদের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে পশ্চিমাদের এই অঞ্চল থেকে বিতাড়নের পরিকল্পনা হয় এবং শিয়াদেরও নিঃশেষ করার চেষ্টা শুরু হয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সাবেক সমন্বয়ক ড্যানিয়েল বেনজামিন জানান, আল-কায়েদার বিভিন্ন নথিতে দেখা যায়, 'আমেরিকানরা তাদের শত্রু, ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা তাদের শত্রু, ইসরাইল শত্রু, তবে সবার চেয়ে বড় শত্রু শিয়ারা। সুন্নিপন্থি সৌদি আরবের অনেক বইয়ে উল্লেখ আছে, খ্রিস্টান এবং ইহুদীদের চেয়ে শিয়াদের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য বেশি'। কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের অত্যাচারী শাসকরা পশ্চিমাদের এটা বুঝিয়েছেন যে, কঠিন শাসনের মাধ্যমেই শিয়া-সুন্নিদের দমন করা যেতে পারে। কিন্তু দৃশ্য পাল্টে যায় যুক্তরাষ্ট্রে নাইন ইলেভেনের হামলার পর। এরপরই পশ্চিমারা বুঝতে পারে, নিপীড়ক শাসকদের পতনই মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধান করতে পারে। আর তাই ইরাকেই প্রথম আঘাত হানা হয়। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে বিতাড়িত করে শিয়াদের ক্ষমতায় আনা হয়। ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান ইরানপন্থি প্রধানমন্ত্রী নূরি আল-মালিকি। আর এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তেলসমৃদ্ধ সুন্নিপন্থি উপসাগরীয় দেশ সৌদি আরব, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইরান এই সুযোগে পরমাণু ক্ষমতাধর হওয়ার চেষ্টা চালায়। ইরাকের তেল সম্পদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় অনেক পশ্চিমা শাসক মনে করেছিলেন, এই বুঝি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের শিকড় বিস্তার লাভ করলো। কিন্তু সেটা থেমে যায় যখন সিরিয়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত করার আন্দোলন গড়ে ওঠে। আসাদ সুন্নিপন্থি বিদ্রোহীদের দমনে মগ্ন হন। গত চার বছর ধরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আসাদ। সুন্নিরা সারাবিশ্ব থেকে সিরিয়ায় যাচ্ছে আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। ইরান আসাদকে অর্থ এবং কর্মী সবকিছু দিয়ে সহায়তা করছে। আরবের একজন কূটনীতিকের মতে, সিরিয়া এখন আফগানিস্তানে পরিণত হচ্ছে। গতমাসে নিউইয়র্কভিত্তিক সৌফেন গ্রুপ জানায়, সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে প্রায় ১২ হাজার বিদেশি সৈন্য গেছে। তবে সিরিয়া থেকে সুন্নিপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চোখ এখন ইরাকের দিকে। কারণ তারা মনে করেন, খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই দুই দেশের সীমানা মুছে দিতে হবে। কূটনীতিক বলেন, এখন আর কেউ সিরিয়া নিয়ে কথা বলছেন না। সবার মুখে এখন ইরাক। সিরিয়া থেকে হঠাত্ করেই ইরাকের দিকে এগিয়ে আসে আইসিস। ওসামা বিন লাদেন মারা গেছেন। কিন্তু তার আদর্শ এখনো খুব ভালভাবেই বেঁচে আছে। বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী কিংবা বিদ্রোহীদের মধ্যে আইসিসই সবচেয়ে ভয়ংকর। সুন্নি এবং শিয়া দ্বন্দ্বের ফলে এখন ইরাকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে গৃহযুদ্ধ। ২০০৬-০৭ সালেই এই গৃহযুদ্ধের সূচনা। অন্যদিকে সিরিয়ায় এই দ্বন্দ্বে অকালে জীবন দিয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। সিরিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান। '৯০'র দশকে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ৮ বছর ধরে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল ইরান। প্রাণ গেছে ১০ লাখ লোকের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়া এবং ইরাক থেকে অনেকদিন দূরে ছিলেন। কিন্তু সমপ্রতি ইরাকে সুন্নিদের আক্রমণের ফলে আবার যেন কিছুটা পক্ষ-বিপক্ষে সমর্থন দেয়া শুরু করেছেন। ইরাকে সিরিয়া বিরোধীদের প্রশিক্ষণ দিতে তহবিলের যোগান দিচ্ছে। অন্যদিকে ইরাকে ঐকমত্যের সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবার ধারণা হয়তো বাগদাদ দখলের মাধ্যমেই আইসিস ইরাক দখলের ঘোষণা দেবে। কিন্তু না। নাজাফ এবং কারবালা দখল করেই ইরাকে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করতে চায়। কারণ কারবালা এবং নাজাফ শিয়াদের কাছে পবিত্র স্থান। এজন্য বিদ্রোহীরা প্রয়োজনে হত্যা করবে। দরকার হলে মরতেও রাজি। এটা তাদের কাছে পবিত্র একটি যুদ্ধ। আইসিস অঞ্চল: ইরাক এবং সিরিয়ায় এই যুদ্ধ বেশিদিন স্থায়ী হলে তা মধ্যপ্রাচ্যে তথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। এটা বিশ্বের জন্য হুমকিরই সৃষ্টি হবে। কারণ বিশ্ব অর্থনীতি এখনো মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা এবং ইসলাম বিশেষজ্ঞ ভালি নসর মনে করেন, এ অঞ্চলে কেবল নেতৃত্বের দুর্বল কিংবা খারাপ অবস্থার জন্যই সব সমস্যা এবং আমাদের জন্য হুমকির তা নয়। আরো কিছু বিষয় আমাদের জন্য হুমকির। দ্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড গ্রেটার সিরিয়া (আইসিস) অঞ্চলে আছে উচ্চ আধুনিক এবং সম্পূর্ণ মধ্যযুগীয় উভয়ই। ইরাকে আইসিস গোষ্ঠী ১৭শ' সৈন্য হত্যা করে ভিডিও পোস্ট করেছে। এর মাধ্যমে তারা একটা ভীতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। ইরাকে মার্কিন হামলার পর তারা ইরাকে আসে এবং নিজেদের আল-কায়েদা বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু এরপর তারা শিয়াদের হত্যা করতে শুরু করে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরি। এ নিয়ে তিনি দলের কৌশলী নেতা আবু বকর আল-বাগদাদীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। তিনি বিশ্ব জেহাদ আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচিত। যিনি গত শনিবার এক ভিডিও বার্তায় নিজেকে প্রকাশ করলেন এবং নিজেকে খলিফা হিসেবে মেনে নেয়ার আহবান জানান। ২০০৭ সালে যখন আইসিস নিজেদের প্রকাশ করতে শুরু করে তখন মার্কিন সৈন্যরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে দুর্বল করে দেয়। কিন্তু এরপর আবার তারা এখন নিজেদের জানান দিচ্ছে। তাদের এই নতুন জীবনের পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধে উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এমনকি আইসিস'র কর্মীরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী জঙ্গি গোষ্ঠী অপর সুন্নিপন্থি আল-নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে একসঙ্গে মিলে আসাদবিরোধী যুদ্ধ করছে। আল-নুসরা ফ্রন্ট সুন্নিপন্থি পাকিস্তান ভিত্তিক নেতৃত্বের অধীনে আছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, ইরাকে নূরি আল-মালিকীর শাসন। তিনি নিজেকে অনিরাপদ করে তুলেছেন। তিনি ওয়াশিংটনের দাবিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সাবেক ক্ষমতাসীন সুন্নিদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। সুন্নিদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং সামরিক বাহিনী থেকেও অপসারিত করা হয়। আল-মালিকীর নিরাপত্তা বাহিনী সুন্নিদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর হামলা চালায় এবং দমনের চেষ্টা চালায়। অনেক সুন্নি মনে করেন, সাদ্দাম হোসেনের শিয়া ভার্সনের চেয়ে আল-মালিকীর ভার্সন কিছুই নয়। এর প্রমাণ তাদের দখলের চিত্র। তারা এক হাজার সৈন্য নিয়ে ৩০ হাজার সৈন্যের মোকাবেলা করে মসুল দখল করে। তাদের সহোদররা এর আগে কিরকুক, তিকরিত এবং তাল আফার দখল করে। দখল করেছে বৃহত্তম তেলক্ষেত্রও। ইরাকে দখল করতে প্রয়োজনে গেরিলা যুদ্ধের দিকেও যেতে পারে আইসিস। তারা সেটার জন্য প্রস্তুত। তারা সামরিক বাহিনীর গোলাবারুদ, বন্দুক চুরি করছে। এমনকি হেলিকপ্টারও। সিরিয়া এবং ইরাকে তাদের ১০ হাজার কর্মী আছে। ইরাক জয় করতে পারলে তাদের জন্য এক বিরাট জয় হবে। তারা আর্থিক সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। ইরাক ও সিরিয়ার নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে কর আদায় করছে। এমনকি তারা তেল উত্তোলন করছে এবং বিদ্যুত্ বিক্রি করছে। তারা দখলকৃত এলাকায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে। আইসিস-এ কেবল মুসলিম বিশ্বের কর্মীরাই নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্টের ফ্লোরিডার এবং ফ্রান্সের নাগরিকও এই দলে আছেন। ফলে আইসিস ইরাক নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে সেটা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সুখবর হবে না। Related Uncategorized Thoughts বাংলা
A remittance strategy scribble August 7, 2009 As mentioned, last week was a Remittances week in Rome. Remittances continually intrigues me as a market, especially the major focus financial institutions are now placing on this area as an opportunity. This is contradictory as those who need remittance services the most are often those who do not use… Read More
Travel notes for Cox’s Bazar August 3, 2010 FOr future reference- the note can be downloaded from here Related Read More